সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের হাসপাতাল পয়েন্টে অবস্থিত ডিজিটাল ডেন্টাল সার্জারীর মালিক টেকনোলজিষ্ট সুদীপ চ্যাটার্জী ও সহযোগী মিলি রাণী বৈদ্যের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা সহ নানা অভিযোগ উটেছে।
এদিকে একে অপরের সহযোগিতায় দাঁতে ভুল চিকিৎসা করায় এক সিনিয়র সাংবাদিকের পিতা মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় চলছে ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে , জগন্নাথপুর উপজেলায় দাঁতের ডাক্তার হিসাবে পরিচিত সুদীপ চ্যাটার্জী সাধারণ মানুষের সাথে চিকিৎসার নামে নানাভাবে প্রতারনা করে আসছেন । তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ উপজেলার সহজ সরল মানুষের সরলতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত টাকা সহ অপ-চিকিৎসার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ।
তিনি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ব্রাক্ষনগাঁও গ্রামের গৌররী চ্যাটার্জীর ছেলে।
তিনি উপজেলার সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন বাজারে এবং সর্বশেষ হাসপাতাল পয়েন্টে ডিজিটাল ডেন্টাল সার্জারী নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন।
তার সহযোগী হিসেবে চেম্বারে রাখেন এলাকার তরুন মেয়েদের।
এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী নেয় অভিযুক্ত তরুণী মিলি রাণী বৈদ্যও।
তিনি জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের কালীটেকী গ্রামের রাধা কান্ত বৈদ্যের মেয়ে।
ইতোপূর্বে সুদীপ চ্যাটার্জী ও তার প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। তৎকালীন জগন্নাথপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ইয়াসির আরাফাতের কাছে তাকে গুনতে হয়েছে জরিমানা।
তবুও থামছেনা তার অপ-চিকিৎসা।
তিনি ডেন্টাল সার্জন না হলেও কাটা-ছেঁড়া সবই করা হয় তার এই চেম্বারে । ডাক্তার হিসাবে লিখে থাকেন প্রেসক্রিপসনও।
মূলতঃ তিনি একজন ডেন্টাল টেকনোলজিষ্ট। ডিএমটিডি ঢাকা, যাহার রেজি নং ১১৮৬৪১।
তবে প্রকাশ্যে চিকিৎসার নামে এমন প্রতারণা চালিয়ে গেলেও দেখার যেন কেউ নেই।
জানা গেছে, প্রায় ৩ মাস পূর্বে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে গুরুতর অসুস্থ হন জগন্নাথপুরের সিনিয়র সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম লাল মিয়ার পিতা মোঃ ইসকন্দর আলী (৮০)। তিনি পৌর শহরের বাড়ী জগন্নাথপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা।
তিনির দাঁতের ব্যাথা অনুভব করলে পৌর শহরের হাসপাতাল পয়েন্টের ডিজিটাল ডেন্টাল সার্জারী নামক চেম্বারে যান।
সেখানে থাকা ডাক্তার পরিচয়ধারী ডেন্টাল টেকনোলজিষ্ট সুদীপ চ্যাটার্জী চিকিৎসার নামে প্রথমে একটি দাঁত উঠিয়ে দেন।
এ সময় কোন ব্যবস্থাপত্র না দিয়ে তার নিকট থেকে ৬ শত টাকা রেখে তাকে বিদায় করে দেয়া হয়।
কোন ঔষধপত্র না দেওয়ায় কয়েকদিন পর ইসকন্দর আলীর দাঁতে প্রচন্ড ব্যাথা হলে সহ্য করতে না পেরে তিনি পূনরায় গত ৫ মে সকাল ১১ টায় ডাক্তার নামক ডেন্টাল টেকনোলজিষ্ট সুদীপ চ্যাটার্জীর কাছে গেলে তিনি বলেন আরো ৬ শত টাকা দিলে ব্যাথা ভাল হয়ে যাবে।
তখন তিনি দাবীকৃত টাকা দিলে তার ডিজিটাল ডেন্টাল নামক চেম্বারে শুইয়ে আরেকটি ভাল দাঁত ফেলে দেয়ার চেষ্টা করেন।
এ সময় চেম্বারে থাকা তার সহযোগী মিলি রাণী বৈদ্য দাঁতের ঝামিতে অবচেতন করার জন্য পর পর কয়েকটি ইনজেকশন পুশ করিয়া দাঁড়ালো যন্ত্র দিয়ে দাঁতের গুঁড়ায় খুঁড়তে থাকলে মূখ থেকে প্রচন্ড রক্তকরণ হয়।
এসময় টেকনোলজিষ্ট সুদীপ চ্যাটার্জীর সহযোগী মিলি রাণী বৈদ্য বয়োবৃদ্ধ রোগী ইসকন্দর আলীকে আরো অবচেতন করতে গিয়ে আরেকটি ইনজেকশন পুশ করলে ইনজেকশনের শুইটি ঝামিতে না পড়ে গালে ঢুকে মারাত্মক চিদ্র জখম হয়।
তখন তিনি আঘাতের ফলে অজ্ঞান হয়ে পড়লে সুদীপ চ্যাটার্জী একটি ভাল দাঁত উপড়ে ফেলেন।
এক পর্যায়ে ডাক্তার নামক প্রতারক সুদীপ চ্যাটার্জী ও নার্স নামক সহযোগী মিলি রাণী বৈদ্য জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে তাকে নিয়ে ভর্তি করান।
প্রায় দেড় ঘন্টা অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকার পর জ্ঞান ফিরলে চর্তুরতার মাধ্যমে তাকে বাড়িতে পাটিয়ে দেন সুদীপ চ্যাটার্জী ও মিলি রাণী বৈদ্য।
কিছুদিন যেতে না যেতেই দাঁতের গুড়ায় প্রচন্ড ব্যাথা ও মূখ ফুলে গেলে তাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সিলেট শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর উক্ত স্থানে দুরারোগ্য আক্রান্ত হওয়ার রির্পোট আসে।
এ ঘটনায় ভূক্তভোগী ইসকন্দর আলীর ছেলে সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম লাল মিয়া ভুল চিকিৎসার মাধ্যমে পিতাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ায় ডাক্তার পরিচয়ধারী সুদীপ চ্যাটার্জী ও সহযোগী মিলি রাণী বৈদ্যের বিরুদ্ধে (১৬ই জুন) জগন্নাথপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
এরই প্রেক্রিতে জগন্নাথপুর থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়। যাহার মামলা নং -০৫ তারিখ ০৭/০৭/২০২২ ইং।
সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম লাল মিয়া বলেন
আমার পিতা ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ।
আর যাহাতে কারো জীবন অপ-চিকিৎসায় বিপন্ন না হয়, আমি এখন সেটাই চাই।
এদের মত ডাক্তার নামের টেকনোলজিষ্টের কারনে অপ-চিকিৎসার শিকার সাধারণ মানুষ । আমি ন্যায় বিচারের জন্য লড়ে যাবো।
জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প: প: কর্মকর্তা ডাঃ মধু সুদন ধর বলেন ডাক্তার হিসাবে এটা মেনে নেওয়া যায়না।
তিনি তো ডিপ্লোমা দিয়েছেন, ডেন্টাল সার্জন না। প্রেসক্রিপসন দ্বারা ব্যবস্থাপত্র দেয়ারও আইনত ভিত্তি নেই। এ ধরনের কাজ করতে হলে এখানে একজন ডেন্টাল বিশেষজ্ঞ থাকার কথা।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই জিন্নাতুল ইসলাম তালুকদার জানান
অভিযোগের বিষয়ে থানায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আব্দুস সাত্তার বলেন গ্রেফতার এড়াতে আসামী পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।